ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

মমেক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে বহিস্কার

মমেক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে বহিস্কার

ছবি: সমকাল

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২২ | ০৬:০৩ | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২২ | ০৭:৫৮

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জনকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আরও আট শিক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে একাডেমিক কাউন্সিল ওই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি মেডিকেল কলেজে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা এবং শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ এনে মানববন্ধন করার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সার্জারি বিষয়ের মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষা চলাকালীন সময় অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বহিরাগত (একজন ডিএসবি সদস্য) লোকের উপস্থিতিতে পরীক্ষা সম্পন্ন করেন- উল্লেখ করে পরীক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ আল হাসান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেন। এছাড়া গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মেডিকেল কলেজের এম-৫৩ ব্যাচের এক ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব প্রদানের প্রতিবাদে কলেজ ভবনের সামনে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী মানববন্ধন করেন। দুটি ঘটনা তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বৈঠক হয়। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি গাইনী বিভাগের অধ্যাপক ডা. তায়েবা তানজিম মির্জাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন অধ্যক্ষ। পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর শনিবার একাডেমিক কাউন্সিল বৈঠকে বসেন। একাডেমিক কাউন্সিলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের সিদ্ধান্তের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল্লাহ আল হাসান নিজের আবেদন পত্রে উল্লেখ করেছিলেন- উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বহিরাগত (একজন ডিএসবি সদস্য) লোকের উপস্থিতিতে পরীক্ষা সম্পন্ন করা ও ইতোপূর্বে সরকার বিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থেকে সাধারণ শিার্থীদের মাঝে ভয়ভিতি সৃষ্টি করে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছেন অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। আরও উল্লেখ করা হয়, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিজের মনগড়া ফলাফল প্রস্তুত পূর্বক বেছে বেছে সরকার দলীয় ছাত্রদের অনুত্তীর্ণ করেছেন। ওই আবেদনপত্রে অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদকে ‘দৃষ্কৃতকারী’ শব্দে অভিহিত করেছিলেন। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন অনুযায়ী অ্যধাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগটি মিথ্যা বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রমাণিত হয়। একজন সম্মানীত শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এবং আবেদনপত্রে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করায় মো. আব্দুল্লাহ আল হাসানকে ডিসিপ্লিনারী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আগামী তিন বছরের জন্য সমস্ত একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে তিনি কলেজ ছাত্রাবাসে অবস্থান করতে পারবেন না মর্মেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাবের অভিযোগ দেওয়ার বিচার চেয়ে করা মানববন্ধন করা হলেও অভিযোগটি মিথ্যা বলে প্রতিবেদন দেয় তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে হাসানের পাশাপাশি মিথ্যা অভিযোগ এনে শিক্ষকের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য মানববন্ধন করায় ফায়দুর রহমান আকাশ ও তামান্না তাসকিনকে ২ বছরের জন্য সমস্ত একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারা ছাড়াও সুনীত কুমার দাস, সানবীম খান, মাহিদুল হক, তানবিন হাসান, কাশফী তাবরীজ, রাপ্পু কর্মকার ও সাখাওয়াত হোসেন সিফাতকে এক বছরের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে ওই শিক্ষার্থীরা ছাত্রাসাবাসেও অবস্থান করতে পারবেন না।

শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধনে অনিচ্ছাকৃত অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থী মো. মাহমুদুজ্জামান, মেহরাব হোসেন, নাজমুছ সাকিব, মো. রিজভি আল নাহিয়ান হিয়া, মো. জিম রহমান, মো. সাকিব খান শাওন, জেরিন তাসনিম ও মো. জিহাদুল হক তাঈবকে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম অথবা কলেজের শৃঙ্খলা বিরোধী কোনো কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করবেন না মর্মে নিজে এবং বৈধ অভিভাবকের মুচলেকা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। মুচলেকা স্বাপেক্ষে ওই শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কার্ডক্রম ও কলেজের ছাত্রাবাসে অবস্থান করতে পারবেন।

আরও সিদ্ধান্ত হয়- শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা মেয়াদ শেষে একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য একাডেমিক কাউন্সিলের পূর্বানুমতি নিতে হবে এবং শাস্তিকালীন সময়ে তাদের কার্যক্রম ও সংশোধন সন্তোষজনক মনে হলে কলেজ একাডেমিক কাউন্সিল পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা কলেজ এবং হাসপাতালের শিক্ষাসহ সবধরনের কার্যক্রম থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য বিরত থাকবে এবং কলেজ ছাত্রাবাস-ছাত্রীনিবাসে অবস্থান করতে পারবেন না। এর ব্যত্যয় হলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসে মিছিল, মিটিং, সভা সমাবেশসহ সবধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে।

জানা গেছে, মমেক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল হাসান গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এমবিবিএস প্রফেশনাল পরীক্ষার সার্জারি বিভাগের মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। সেই দিন থেকে শুরু হয় ঘটনার সূত্রপাত। মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় মেডিসিন বিভাগে কৃতকার্য হলেও সার্জারি ও গাইনী বিভাগের পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারেননি। ফলে সম্প্রতি চলমান পরীক্ষায় ফের অংশ নেন। এই পরীক্ষাতেও কৃতকার্য হতে পারবে না এমন শঙ্কা থেকে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কর্মসূচি করায় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের।

বিষয়টি নিয়ে মমেক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল্লাহ আল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ থাকার কারণে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে গত ২৭ নভেম্বর সমকালের কাছে আবদুল্লাহ আল হাসান দাবি করেছিলেন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিার্থীদের মানববন্ধনের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. চিত্তরঞ্জন দেবনাথ বলেন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যারা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তাদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

×