মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আলমগীর

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২২ | ০৯:২৫ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২ | ১১:০৬
এক সময় মানবপাচারে জড়িত ছিলেন আলমগীর হোসেন। ভুয়া ভিসায় বিদেশে পাঠিয়ে বহু মানুষকে বিপদে ফেলেছেন। এই পথ অবলম্বন করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন অর্থ। মানবপাচারসহ তার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা রয়েছে দেশের বিভিন্ন থানায়। এক সময়ের মানবপাচারকারী আলমগীর সম্প্রতি প্রতারণার কৌশল পাল্টিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজ প্রজেক্টের নামে ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করে সাব ঠিকাদারদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন অন্তত ৪০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে প্রায় একশ' কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আলমগীর।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
আলমগীর ও তার দুই সহযোগীকে গত বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। গ্রেপ্তার অপর দুজন হলেন- শফিকুল ইসলাম ও ইমরান হোসাইন।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন বলেন, রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে 'আল তাকদীর ইন্টারন্যাশনাল' নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খুলেছেন আলমগীর। তিনি এটির চেয়ারম্যান। শাফিকুল ইসলাম প্রজেক্ট ডিরেক্টর এবং ইমরান হোসাইন ডিরেক্টর প্রশাসন। তার প্রতিষ্ঠান ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার কাজ পেয়েছেন বলে প্রচার করেন। সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজ প্রজেক্টের ৩০০ কোটি সিএফটি বালি সরবরাহের জন্য গত বছরের মার্চে ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছেন বলে তার নিজস্ব অনলাইন টিভি 'তাকদীর টিভি'তে প্রচারণা চালান। এ কাজের জন্য তিনি সাব ঠিকাদার নিয়োগ দেবেন- এমন প্রচারণাও চালানো হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৩০০ সাব ঠিকাদার সংগ্রহ করা হয়। এক সিএফটি বালিতে ১০ টাকা লাভ হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাব ঠিকাদারদের কাউকে ২ কোটি সিএফটি, কাউকে ৫ কোটি সিএফটি, কাউকে ১০ কোটি সিএফটি বালি ভরাটের কাজ দেওয়ার চুক্তি করেন। এ কাজের কমিশন হিসেবে এসব সাব ঠিকাদারের কাছ থেকে অন্তত ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আলমগীর।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আলমগীর নিজেকে বড় মাপের ঠিকাদার প্রমাণের জন্য গুলশান-১ এ অফিস নিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে ডেকোরেশন করেন। গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে ১১০ আইটেমের খাবার পরিবেশন করে তার নিয়োগকৃত সাব ঠিকাদারদের আপ্যায়ন করা হয়। এ ছাড়া তাদের বিভিন্ন রিসোর্টে নিয়ে কয়েকবার বড় ধরনের পার্টির আয়োজনও করা হয়। এমনকি সাব ঠিকাদারদের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে প্রজেক্ট এলাকায় বালি সরবরাহের নিজস্ব ডাম্পিং পয়েন্ট উদ্বোধন অনুষ্ঠান করেন তিনি। জাল-জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাতের পর আত্মগোপনে চলে যান আলমগীর ও তার সহযোগীরা। বালি ফেলানোর জন্য আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পান ভুক্তভোগীরা। পরে গুলশানে আল-তাকদীর নামের প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে সেখানেও তালা ঝুলতে দেখেন। এর পরই তারা প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। তখন সিআইডিকে বিষয়টি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, প্রতারকচক্রের প্রধান আলমগীরের সঙ্গে ব্যাংকের লেনদেনের সূত্র ধরে ইস্টার্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা সালমা সুলতানা সুইটির সঙ্গে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। নারী ব্যাংক কর্মকর্তা সালমা নিজে দায়বদ্ধ হয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে ২০০০ কোটি টাকার এলসি, ১২০০ কোটি টাকা ক্যাশ করে দেবে বলে আলমগীরকে আশ্বস্ত করেন। আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আলমগীর প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে সালমাকে ১০ কোটি টাকার কাবিন দিয়ে গত বছর জুলাই মাসে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সালমার চাহিদা অনুযায়ী ১০ কোটি টাকা কাবিন করা হয়। এর পর মাসে দুই লাখ টাকা ভাড়া চুক্তিতে গুলশানের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তারা বসবাস শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে এলসি না হওয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে মনমালিন্য হয় আলমগীরের। এক পর্যায়ে গত নভেম্বরে বিয়ে বিচ্ছেদ হয় তাদের। ১০ কোটি টাকা দেনমোহরের মধ্যে নগদ ৪ কোটি টাকা এবং ৭৫ লাখ টাকা স্বর্ণলাঙ্কার দেওয়া হয়েছে সালমাকে। দেনমোহরের বাকি টাকা আদায়ের জন্য তিনি আলমগীরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন।
ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, আলমগীর বিভিন্ন সময় নানা কৌশল ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে অন্তত একশ' কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ডজন খানেক মামলা আছে।