ঢাকা রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

চাইলেই গায়কী বদলে ফেলতে পারব না: এলিটা

চাইলেই গায়কী বদলে ফেলতে পারব না: এলিটা

এলিটা করিম

সাদিয়া মুনমুন

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৫:১২

বেশ অদ্ভুত নাম ‘চিনি দেড় চামচ’। কোনো অ্যালবামের শিরোনাম এমন হতে পারে, তা হয়তো অনেকে ভাবেননি। শুধু তাই নয়, অ্যালবামের গানগুলোয় এলিটা করিমকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার বিষয়টিও ছিল চমকে দেওয়ার মতো। প্রায় দুই যুগ ধরে গানে গানে শ্রোতাদের হৃদয় আন্দোলিত করে যাচ্ছেন নন্দিত এই কণ্ঠশিল্পী। কিন্তু এবারের ইপি [এক্সটেন্ডেড প্লে] অ্যালবামের গানগুলো আগের সব আয়োজন থেকে একেবারেই অন্যরকম। 

মূলত এই এক্সটেন্ডেড প্লের ‘চিনি দেড় চামচ’ ও ‘প্রেম হবে দিন শেষে’ গান শ্রোতারা এমন দাবি করে আসছেন। এখন প্রশ্ন হলো, এলিটার গানে বিষয়বৈচিত্র্য তো আগেও ছিল, কিন্তু এবারের অ্যালবাম আয়োজন একটা ভিন্ন ধাঁচের হয়ে উঠল কীভাবে? এ প্রশ্নের উত্তর আসলে অ্যালবামের মাঝেই লুকিয়ে আছে। খেয়াল করলে স্পষ্ট হবে যে, এই আয়োজনের সঙ্গে তিন প্রজন্ম দারুণভাবে মিশে গেছেন। এই অ্যালবামের গীতিকবি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী; যিনি কয়েক দশক ধরে নিরলস গান লিখে যাচ্ছেন।

বরেণ্য ও তারকাশিল্পীদের পাশাপাশি তরুণরাও তাঁর লেখা গান গেয়ে কুড়িয়েছেন অগণিত শ্রোতার প্রশংসা। কল্পনা ও বাস্তবতার মিশেলে কীভাবে সময়কে ধারণ করতে হয়, তাঁর অসংখ্য উদাহরণ রেখে গেছেন এই গীতিকার। একইভাবে রেনেসাঁর তারকাশিল্পী পিলু খান, তাঁর সুরের মায়াজালে শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে যাচ্ছেন দশকের পর দশক। ‘দেড় চামচ চিনি’-এর সব গানের সুরস্রষ্টা এই পিলু খান। তাঁর সুরের অ্যালবামের সংগীতায়োজন করেছেন কলকাতার দেবাশীষ সোম, যিনি এই প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন। তাই জঙ্গী-পিলু-দেবাশীষ ত্রয়ীর সঙ্গে এলিটার এবারের আয়োজন পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। যার সুবাদে আজব রেকর্ডস থেকে প্রকাশিত ‘চিনি দেড় চামচ’ শ্রোতাদের কাছে হয়ে উঠেছে সময়ের অভিনব আয়োজন। 

সময়ের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে শিল্পীরা নতুন সব আয়োজন করেন। তাই অবাক হতে হয়েছে এটা দেখে যে, এলিটা তাঁর গানে পুরোনো সময়কে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন। কিন্তু কেন? সে প্রশ্নের জবাবে এলিটা বলেন, ‘আমাদের বেড়ে ওঠা সময়ে অনেক কালজয়ী গান সৃষ্টি হয়েছে। যার আবেদন এখনও এতটুকু কমেনি। তাই আমারও ইচ্ছা ছিল, নব্বই দশকের সুরের ধাঁচে নতুন কিছু গান গাওয়ার। সেই ইচ্ছা পূরণেই আশি-নব্বই দশকের আলোচিত গীতিকবি শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর লেখা ও সুরকার পিলু খানের সুরে গান গাওয়া। প্রথম গান রেকর্ড করার পরও অ্যালবাম নিয়ে কিছু ভাবিনি। মূলত দ্বিতীয় গান রেকর্ডের পরেই ইপি অ্যালবাম তৈরি বিষয়টি মাথায় আসে। সাধারণত ৩টি গান দিয়ে ইপি তৈরি করা হয়। সেখানে ৩টি জায়গায় ৪টি গান নিয়ে ইপি অ্যালবামটি প্রকাশ করা হয়েছে।’

এতে গেল নব্বই দশকের সুরের আদলে গান ও অ্যালবাম তৈরি বিষয়। এখন প্রশ্ন হলো, এই সময়ের শ্রোতা অ্যালবামের গানগুলো কীভাবে গ্রহণ করবেন, তা নিয়ে এই শিল্পীর ভাবনাটা কী ছিল?

তা জানতে চাইলে এলিটা বলেন, ‘শ্রোতা কখনোই আগে নির্ধারণ করে দেন না, কোন ধরনের গান গাইতে হবে। আমাদের গাওয়া কোনো গান যখন তাদের মনে ছাপ ফেলে, তখন সেই ধরনের গানই বারবার শুনতে চান। তাই ভিন্ন ধাঁচের যে আয়োজনই করি, সেটা আগে শ্রোতার কাছে পৌঁছাতে হবে। এরপর তারা বিচার করবেন, সেটি তাদের কেমন লেগেছে। তাই আশি-নব্বই দশকের মেলোডি সুরের যে ছোঁয়া আমাদের নতুন গানগুলোয় রাখা হয়েছে, তা কারও ভালো লাগবে কিনা, সেই প্রশ্ন সামনে না রেখে, গানগুলো যতটা শ্রুতিমধুর ও সময়োপযোগী করে তোলা যায়, সেই চেষ্টাই করেছি। তবে যা কিছুই করেছি, তা নিজস্বয়তা ধরে রেখে। এ ছাড়া এটাই সত্যি যে, চাইলেই গায়কী বদলে ফেলতে পারব না। এজন্য যা কিছুই করেছি, সেটা নিজের মতোই হয়েছে।’

অগণিত শ্রোতার প্রিয় এই শিল্পীর এ কথা থেকে বোঝা গেল, তিনি ব্যতিক্রমী যা কিছুই করুন না কেন, যেখানে চিরচেনা এলিটার গায়কী খুঁজে পাওয়া যাবে। তাই শ্রোতার তাঁর গানে নতুন স্বাদ গ্রহণের সুযোগ পাবেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর মাদকতাময় কণ্ঠ ও অনিন্দ্য গায়কী থেকে বঞ্চিত হবেন না কখনও।

আরও পড়ুন

×