ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

দূষিত ঢাকার গল্প

দূষিত ঢাকার গল্প

.

সাজিয়া খান

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫৪

বাংলাদেশে একটি মজার বিষয় হলো, আঞ্চলিকতার টান। কোথাও না কোথাও আমরা সবাই একবার হলেও শুনেছি, ‘বাড়ি কই আপনার?’ রকমারি উত্তরের ভিড়ে আমার উত্তরটা একেবারে সাদামাটা– বাড়ি ঢাকা। কাজের চাপে অথবা অন্য প্রয়োজন ছাড়া ঢাকা শহর হিসেবে কারও কাছে তেমন প্রিয় না। 
কেনই বা হবে? আছে কী এই শহরের! দূষিত ও হট্টগোল যেখানে নিয়তি; বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ওপরের দিকে থাকে ঢাকা। 
আশ্চর্য হলেও সত্য, অধিকাংশ ঢাকাবাসী হয়তো জানে না, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য নিষ্পত্তিকরণ এক বিষয় না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি ছোট অংশ হচ্ছে বর্জ্য নিষ্পত্তিকরণ। পাশাপাশি বর্জ্য পদার্থ

শ্রেণীকরণ, রিসাইকেল ইত্যাদি। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কত বিশাল ও জটিল। এ দেশে অসচেতনতা বর্জ্য অব্যবস্থাপনার প্রধান কারণ। পাশাপাশি আর্থসামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ও জড়িত। ঢাকা শহরজুড়ে রাস্তা বা ফুটপাতে ময়লা দেখতে অভ্যস্ত আমরা। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও নাক চেপে রাস্তা ও ফুটপাত ব্যবহার করা হয়। এর সঙ্গে দেখা যায় ভাগাড়ে ময়লা পোড়ানোর রীতি। কেউ নিষেধ করলে উল্টো তীব্র বিরক্তি মেলে। লেক বা জলাশয়ের পাশে হাঁটতে হাঁটতে টুপ করে হাতে থাকা পানির বোতল বা ঝালমুড়ির ঠোঙা ফেলে দেওয়া খুবই স্বাভাবিক এখানে। কেন করলেন– জানতে চাইলে হয়তো উত্তর আসবে, ‘সবাই করে...।’ সবাই করে বলে কি আমরাও করব? সবাই সচেতন না হলেও কাউকে তো সচেতন হতে হয় এবং সচেতন ব্যক্তির সংখ্যা যত বেশি হবে ততই সমাজের মঙ্গল। অতএব, এই জটিল বিষয়ের সহজ সমাধান করতে এগিয়ে আসুন নিজ নিজ জায়গা থেকে। বড় বড় পরিবর্তন ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেই শুরু হয়। এ নিয়ে কিছু বলা দরকার। 
প্রথমত, একজন মানুষ দিনে কত প্রকার এবং কী পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন করে, এ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিতে হবে। এই মৌলিক বিষয়টি অনেকের অজানা থাকার কারণে কীভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যায়, তার প্রয়োগ হচ্ছে না। এ জন্য আপনাকে বর্জ্য পদার্থের জটিল তত্ত্বীয় শ্রেণীকরণে যেতে হবে না। সহজভাবে চিন্তা করুন, একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে খাবার প্রয়োজন হয়। খাদ্যদ্রব্য অনেক ক্ষেত্রেই প্যাকেটজাত হয়। যখন খাবারগুলো রান্না বা খাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়, ওই সময়ই প্যাকেট এবং জৈব বর্জ্য আলাদা করে ফেলা যায়। সময়-সুযোগ বুঝে পড়ে থাকা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন ঘর সাজানোর কিছু। দ্বিতীয়ত, ফাস্ট ফ্যাশনের এ যুগে অসংখ্য প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় জামাকাপড় ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে থ্রিফট করা যেতে পারে বিজনেস এথিকস মাথায় রেখে। ক্ষেত্রবিশেষে রিসাইকেল বা আপসাইকেল। এ তো গেল ব্যক্তিগত উদ্যোগের কথা। 
এখন আসুন সামাজিকভাবে কী কী করা যেতে পারে। এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে। সামাজিকভাবে বড় আকারে কিছু করতে হলে অব্যশই সরকার বা আঞ্চলিক প্রশাসনের সহযোগিতা দরকার।

ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, প্রাইমারি বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার প্লান্ট নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সিন্ডিকেট ব্যবসা বন্ধ করা প্রয়োজন। এর মানে এই নয়, এই ব্যবস্থাপনাকে বাণিজ্যিকীকরণ করা যাবে না। এই ব্যবস্থাপনার বাণিজ্যিকীকরণের প্রয়োজন আছে। তবে তা হতে হবে পরিবেশ ও সামাজিক বাস্তবতার কথা মাথায় রেখে এবং অব্যশই জনকল্যাণমুখী। এ ক্ষেত্রে বুয়েট শিক্ষার্থীদের বর্জ্য থেকে এনার্জির মতো প্রজেক্টে অর্থায়ন এবং অবকাঠামোগত অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয় চিন্তা করা যেতে পারে। 
প্রয়োজনীয়তার খাতিরে বা জন্মসূত্রে যেভাবেই ঢাকায় থাকুন না কেন; দিনের শেষে শহরটা আমাদেরই। তাই শহরটা সুন্দর রাখার দায়িত্ব আমাদেরই।

সাজিয়া খান: শিক্ষার্থী, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

আরও পড়ুন

×