দাফনের ১১দিন পর কবর থেকে উত্তোলন করা হলো শিশু মাইশার মরদেহ

মারুফা জাহান মাইশা
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৪:৫৭ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৫:১৭
মৃত্যু’র প্রকৃত কারণ নির্ণয়ে দাফনের ১১ দিন পর ৬ বছর বয়সী শিশু মারুফা জাহান মাইশা’র লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। সোমবার বিকেল ৩টার দিকে কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যাপারী পাড়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
লাশ উত্তোলনের সময় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রেদওয়ান ইসলাম, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের রূপনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জমশেদ আলী টুংকু, একই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম দুলাল, মৃত শিশু মাইশার বাবা মো. মোজ্জাফর হোসেন, মা বেলী বেগমসহ স্বজন ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর মধ্যরাতে শিশু মারুফা জাহান মাইশাকে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল।
মৃত শিশু মাইশা’র বাবা মো. মোজ্জাফর হোসেন জানান, ছোট বেলায় আগুনে পুড়ে যাওয়ায় বাঁকা হওয়া ডান হাত ঠিক করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মাইশাকে। সেখানে মহাখালীস্থ জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনিস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক (সার্জারি) ডা. আহসান হাবীরের পরামর্শ মতো ৩০ নভেম্বর রূপনগর আবাসিক আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে সকালে মাইশার অস্ত্রোপচার করা হয়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে বলে জানানো হয়। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার রুম থেকে বের হয়ে জানান মাইশার জ্ঞান ফিরছে না। ওই হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় মাইশাকে তাড়াহুড়া করে আইসিইউতে নেওয়ার কথা বলে চিকিৎসক ডা. আহসান হাবীব নিজেই এ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে একজন নার্স এবং একজন ওয়ার্ড বয়কে দিয়ে মাইশাকে মিরপুর মাজার রোডে অবস্থিত গ্লোবাল স্পেশালাইজড হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে পাঠিয়ে দেন। সেখানে কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার তৌহিদুল আশ্রাফ সজিব পরীক্ষা করে জানান, এখানে আসার আগে মাইশার মৃত্যু ঘটেছে। এরপর চিকিৎসকসহ আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালের লোকজন তাড়াহুড়া করে অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে মাইশার লাশসহ তার পরিবারের লোকজনকে কুড়িগ্রামে পাঠিয়ে দেন। ওই দিন রাতে মাইশার লাশ দাফনের জন্য গোসল করার সময় দেখা যায় নাভির নিচে কাটা। কাটা জোড়া দিতে ১৭ টি সেলাই করা হয়েছে। তখন বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়লে সবার মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মৃত শিশু মাইশার বাবা মোজ্জাফর হোসেন (৩৩) বাদী হয়ে ঢাকার মহাখালীস্থ জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনিস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি) ড. আহসান কবীর, ডা. শরিফুল ইসলাম, ডা. রনি-এই ৩ জন চিকিৎসক এবং ঢাকার রূপনগর এলাকার আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালের অজ্ঞাতনামা মালিক কর্র্তৃপক্ষকে আসামি করে ঢাকার রূপনগর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি চিকিৎসায় পরস্পরের অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর ঘটনার অপরাধে পেনাল কোড ১৮৬০-এর ৩০৪-ক/৩৪ ধারায় রেকর্ড করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক নয়ন দাস জানান, গত ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে মামলাটি রেকর্ডভূক্ত করা হয়। এরপর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয়ে শিশু মাইশা’র লাশ কবর থেকে উত্তোলনপূর্বক ময়না তদন্ত করার জন্য ৬ ডিসেম্বর সিএমএম আদালতে আবেদন দাখিল করা হয়। গত ৮ ডিসেম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট আরফাতুল রাকিব মাইশার লাশ কবর থেকে উত্তোলনপূর্বক ময়না তদন্ত করার আদেশ দেন।