করোনার প্রভাব
ক্ষেতেই পচছে তরমুজ
সারাদেশের সঙ্গে নৌ ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় চাষিরা ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলতে পারছেন না - সংগৃহীত
মুফতী সালাহউদ্দিন, পটুয়াখালী
প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২০ | ১৩:০৩
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় পটুয়াখালী অঞ্চলের তরমুজ ক্ষেতেই পচছে। লঞ্চ, ট্রলার, ট্রাক, পিকআপসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় চাষিরা তরমুজ তুলে বাজারজাত করতে পারছেন না। এমনকি ঘর থেকে লোকজন বাইরে বের হতে না পারায় স্থানীয় বাজারগুলোতেও তরমুজ বিক্রি করতে পারছেন না চাষিরা। এতে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ পড়ে রয়েছে এবং চাষিরা না কাটায় পচন ধরেছে। মাঝেমধ্যে দুয়েকটি ট্রলার কিংবা লরি পাওয়া গেলেও তা স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করা যায়। কিন্তু ঢাকাসহ দেশের বড় বড় জেলা ও বিভাগীয় শহরে তরমুজ বাজারজাত করতে পারছেন না চাষিরা।
এর ফলে এ বছর কপাল পুড়ল পটুয়াখালী জেলার কয়েক হাজার তরমুজচাষির। এসব তরমুজচাষির অন্তত ৪৮০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। দাদনের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের তরমুজচাষি ও তাদের পরিবার-পরিজন।
পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ১৪ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায়। এ উপজেলায় সাত হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয় এবং এরপরই রয়েছে গলাচিপা উপজেলা। এ উপজেলায় তরমুজ চাষ হয় চার হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া কলাপাড়ায় এক হাজার ২৫০ হেক্টর, বাউফলে ৭৫০, দশমিনায় ৫৫০, মির্জাগঞ্জে পাঁচ, দুমকিতে এক এবং সদর উপজেলায় ৫৬ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়। গত বছরের চেয়ে ছয় হাজার ৮৬০ হেক্টর কম জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। গত বছর তরমুজ আবাদ করা হয়েছিল ২১ হাজার ৬৮২ হেক্টর জমিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর মৌসুমের শুরুতে জানুয়ারি মাসে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এতে বেশির ভাগ তরমুজের চারা পচে নষ্ট হয়ে যায়। মৌসুমের শুরুতেই অনেক তরমুজচাষি সর্বস্বান্ত হয়ে যান। এক হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করতে খরচ হয় অন্তত এক লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ফলন শেষে তা বাজারজাত করলে লাভ দাঁড়ায় প্রায় চার লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১৪ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে প্রায় ২৪০ কোটি টাকা এবং উৎপাদিত তরমুজ বাজারজাত করে চাষিদের মোট বিক্রি হওয়ার কথা সাত কোটি ২০ লাখ টাকা। সে হিসাবে ৪৮০ কোটি টাকা লাভ হওয়ার কথা। কিন্তু দেশের এ অবস্থা আর ১৫ থেকে ২০ দিন অব্যাহত থাকলে তরমুজচাষিদের সব শেষ। অর্থাৎ উৎপাদিত তরমুজের ২৫ ভাগও বাজারজাত কিংবা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারবেন না চাষিরা। এতে চাষিদের প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা ক্ষতি হবে।
চাষিরা জানান, এ বছর কিছু কিছু চাষি আংশিক জমির তরমুজ ইতোমধ্যে আগাম বিক্রি করেছেন। তবে, অনেক চাষিই ক্ষেতের তরমুজ আগাম বিক্রি করতে পারেননি। সবেমাত্র উৎপাদিত তরমুজ কেটে বাজারজাত করার উপযোগী হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে উৎপাদিত তরমুজ বাজারজাত করতে পারছেন না তারা। উৎপাদিত তরমুজের বেশির ভাগই ক্ষেতে পচে যাচ্ছে। আবার কিছু কিছু তরমুজ বেশি পেকে যাওয়ায় তা ফেটে যাচ্ছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া এলাকার তরমুজচাষি আবদুল জাব্বার বলেন, 'মুই এই বছর এক কানি জমিনে তরমুজ দিছি। এ্যাতে দেড় থেকে পৌনে দুই লাখ টেহা খচ্চা হইছে। ভাবছিলাম লাখ পাঁচেক (পাঁচ লাখ) টাকা লাভ হইব। ধারদেনা শোধ করে বাকি টেহা দিয়া পরিবারের লোকজন নিয়া শান্তিত থাকমু। কিন্তু হেইডা আর হইল না। করোনায় মোগো হগোল শেষ কইরা দিছে। খ্যাতে তরমুজ পাকছে, ঢাকায় চালান পাঠামু কিন্তু লঞ্চ-ট্রাক কিছুই পাই না। মোগো এলাকার বাজারে নিয়াও ব্যাচতে পারতাছি না। এই তরমুজ ব্যাচতে না পারলে মুই মইরা যামু।'
গঙ্গীপাড়া গ্রামের মো. হাসান মৃধা বলেন, 'মুই দুই কানি জমিনে তরমুজ দেই। এ পর্যন্ত পাঁচ ভাগ তরমুজ ব্যাচতে পারছি। বাকি তরমুজ ক্ষ্যাতেই পইড়্যা রইছে। হপ্তাখানেকের মধ্যে দ্যাশের অবস্থা ভালা হইলে তো হয়তো দুই ভাগ তরমুজ পচনের হাতে থাইকা রেহাই পাইব। আর এর মধ্যে দ্যাশের অবস্থা ভালা না হইলে ৮০ ভাগ তরমুজই খ্যাতেই পচে-গলে নষ্ট হইয়া যাইব।'
কাউখালী গ্রামের মো. ইব্রাহিম হাওলাদার বলেন, 'মুই এই বছর তিন কানি জমিনে তরমুজ লাগাই। এতে মোর খরচ হইছে কমপক্ষে চার লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু মুই অ্যাহন পর্যন্ত তরমুজ ব্যাচতে পারি নাই এবং কোথাও চালান পাঠাইতে পারি নাই। হগোল তরমুজ পাইকা ক্ষ্যাতেই ফুইটা যাচ্ছে। লঞ্চ, ট্রলার, ট্রাক কিছুই নেই, কিতে কইরা তরমুজ ঢাকা পাঠামু। ৮-১০ দিনের মধ্যে তরমুজ চালান করতে না পারলে ক্ষ্যাতেই তরমুজ নষ্ট হইয়া যাইব। এর মধ্যে কতগুলা তরমুজ ক্ষ্যাতেই পইচ্চা গেছে। দ্যাখতেছি করোনায় মোগোরে করলা ভাজা কইর্যা ছাড়ব।'
ছোটবাইদিয়া এলাকার তরমুজ আলী আজগর চৌকিদার বলেন, 'মুই দুই কানি জমিনে তরমুজ দিছি। এইতে মোর প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার টেহার মতন খচ্চা হইছে। এহনও তরমুজ ব্যাচতে পারি নাই। ঢাকাতে পাঠামু হ্যাও পারতাছি না। যানবাহন কিছুই চলে না। সরকার সব বন্ধ কইরা দিছে। আর একটা হপ্তাহ থাকলেই কাম সারছে। ওই তিন লাখ ২০ হাজার টেহা ক্ষ্যাতেই পচবে। আর বউ-বাচ্চা লইয়া মোগো না খাইয়া মরতে হইব।'
জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ হ্রদয়েশ্বর দত্ত জানান, এ বছর জেলায় ১৪ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক কম। কারণ, মৌসুমের শুরুতে নভেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রচুর ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। এতে তরমুজের চারা নষ্ট হয়ে প্রথম ধাপেই অনেক চাষির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে তরমুজচাষিদের নতুন করে চারা তৈরি করতে হয়েছে। এখানেই চাষিদের বড় একটা ধকল কাটিয়ে উঠতে হয়েছে। আবার কেউ কেউ এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতেও পারেনি। ফলে এ বছর তরমুজের আবাদ গত বছরের তুলনায় কম হয়েছে। তবে, এ বছর ফলন ভালোই হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু থমকে গেছে। তা না হলে তরমুজচাষিরা এ বছর ভালো লাভবানই হতো। তারপরও কৃষি বিভাগ চেষ্টা করছে যাতে চাষিরা তরমুজ বাজারজাত করতে পারেন। তবে, তরমুজ বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে পরিবহন চলাচলে কোনো বিধি নিষেধাজ্ঞা নেই। তরমুজ বাজারজাতকরণে পরিবহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ না থাকার চাষিদের লিখিত ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে প্রতিটি উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে। তারপরও স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিক মিলে যদি একত্রে উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে চাষিদের তরমুজ বাজারজাতকরণে আর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
এর ফলে এ বছর কপাল পুড়ল পটুয়াখালী জেলার কয়েক হাজার তরমুজচাষির। এসব তরমুজচাষির অন্তত ৪৮০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। দাদনের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের তরমুজচাষি ও তাদের পরিবার-পরিজন।
পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ১৪ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায়। এ উপজেলায় সাত হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয় এবং এরপরই রয়েছে গলাচিপা উপজেলা। এ উপজেলায় তরমুজ চাষ হয় চার হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া কলাপাড়ায় এক হাজার ২৫০ হেক্টর, বাউফলে ৭৫০, দশমিনায় ৫৫০, মির্জাগঞ্জে পাঁচ, দুমকিতে এক এবং সদর উপজেলায় ৫৬ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়। গত বছরের চেয়ে ছয় হাজার ৮৬০ হেক্টর কম জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। গত বছর তরমুজ আবাদ করা হয়েছিল ২১ হাজার ৬৮২ হেক্টর জমিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর মৌসুমের শুরুতে জানুয়ারি মাসে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এতে বেশির ভাগ তরমুজের চারা পচে নষ্ট হয়ে যায়। মৌসুমের শুরুতেই অনেক তরমুজচাষি সর্বস্বান্ত হয়ে যান। এক হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করতে খরচ হয় অন্তত এক লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ফলন শেষে তা বাজারজাত করলে লাভ দাঁড়ায় প্রায় চার লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১৪ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করতে চাষিদের খরচ হয়েছে প্রায় ২৪০ কোটি টাকা এবং উৎপাদিত তরমুজ বাজারজাত করে চাষিদের মোট বিক্রি হওয়ার কথা সাত কোটি ২০ লাখ টাকা। সে হিসাবে ৪৮০ কোটি টাকা লাভ হওয়ার কথা। কিন্তু দেশের এ অবস্থা আর ১৫ থেকে ২০ দিন অব্যাহত থাকলে তরমুজচাষিদের সব শেষ। অর্থাৎ উৎপাদিত তরমুজের ২৫ ভাগও বাজারজাত কিংবা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারবেন না চাষিরা। এতে চাষিদের প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা ক্ষতি হবে।
চাষিরা জানান, এ বছর কিছু কিছু চাষি আংশিক জমির তরমুজ ইতোমধ্যে আগাম বিক্রি করেছেন। তবে, অনেক চাষিই ক্ষেতের তরমুজ আগাম বিক্রি করতে পারেননি। সবেমাত্র উৎপাদিত তরমুজ কেটে বাজারজাত করার উপযোগী হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে উৎপাদিত তরমুজ বাজারজাত করতে পারছেন না তারা। উৎপাদিত তরমুজের বেশির ভাগই ক্ষেতে পচে যাচ্ছে। আবার কিছু কিছু তরমুজ বেশি পেকে যাওয়ায় তা ফেটে যাচ্ছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া এলাকার তরমুজচাষি আবদুল জাব্বার বলেন, 'মুই এই বছর এক কানি জমিনে তরমুজ দিছি। এ্যাতে দেড় থেকে পৌনে দুই লাখ টেহা খচ্চা হইছে। ভাবছিলাম লাখ পাঁচেক (পাঁচ লাখ) টাকা লাভ হইব। ধারদেনা শোধ করে বাকি টেহা দিয়া পরিবারের লোকজন নিয়া শান্তিত থাকমু। কিন্তু হেইডা আর হইল না। করোনায় মোগো হগোল শেষ কইরা দিছে। খ্যাতে তরমুজ পাকছে, ঢাকায় চালান পাঠামু কিন্তু লঞ্চ-ট্রাক কিছুই পাই না। মোগো এলাকার বাজারে নিয়াও ব্যাচতে পারতাছি না। এই তরমুজ ব্যাচতে না পারলে মুই মইরা যামু।'
গঙ্গীপাড়া গ্রামের মো. হাসান মৃধা বলেন, 'মুই দুই কানি জমিনে তরমুজ দেই। এ পর্যন্ত পাঁচ ভাগ তরমুজ ব্যাচতে পারছি। বাকি তরমুজ ক্ষ্যাতেই পইড়্যা রইছে। হপ্তাখানেকের মধ্যে দ্যাশের অবস্থা ভালা হইলে তো হয়তো দুই ভাগ তরমুজ পচনের হাতে থাইকা রেহাই পাইব। আর এর মধ্যে দ্যাশের অবস্থা ভালা না হইলে ৮০ ভাগ তরমুজই খ্যাতেই পচে-গলে নষ্ট হইয়া যাইব।'
কাউখালী গ্রামের মো. ইব্রাহিম হাওলাদার বলেন, 'মুই এই বছর তিন কানি জমিনে তরমুজ লাগাই। এতে মোর খরচ হইছে কমপক্ষে চার লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু মুই অ্যাহন পর্যন্ত তরমুজ ব্যাচতে পারি নাই এবং কোথাও চালান পাঠাইতে পারি নাই। হগোল তরমুজ পাইকা ক্ষ্যাতেই ফুইটা যাচ্ছে। লঞ্চ, ট্রলার, ট্রাক কিছুই নেই, কিতে কইরা তরমুজ ঢাকা পাঠামু। ৮-১০ দিনের মধ্যে তরমুজ চালান করতে না পারলে ক্ষ্যাতেই তরমুজ নষ্ট হইয়া যাইব। এর মধ্যে কতগুলা তরমুজ ক্ষ্যাতেই পইচ্চা গেছে। দ্যাখতেছি করোনায় মোগোরে করলা ভাজা কইর্যা ছাড়ব।'
ছোটবাইদিয়া এলাকার তরমুজ আলী আজগর চৌকিদার বলেন, 'মুই দুই কানি জমিনে তরমুজ দিছি। এইতে মোর প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার টেহার মতন খচ্চা হইছে। এহনও তরমুজ ব্যাচতে পারি নাই। ঢাকাতে পাঠামু হ্যাও পারতাছি না। যানবাহন কিছুই চলে না। সরকার সব বন্ধ কইরা দিছে। আর একটা হপ্তাহ থাকলেই কাম সারছে। ওই তিন লাখ ২০ হাজার টেহা ক্ষ্যাতেই পচবে। আর বউ-বাচ্চা লইয়া মোগো না খাইয়া মরতে হইব।'
জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ হ্রদয়েশ্বর দত্ত জানান, এ বছর জেলায় ১৪ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক কম। কারণ, মৌসুমের শুরুতে নভেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রচুর ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। এতে তরমুজের চারা নষ্ট হয়ে প্রথম ধাপেই অনেক চাষির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে তরমুজচাষিদের নতুন করে চারা তৈরি করতে হয়েছে। এখানেই চাষিদের বড় একটা ধকল কাটিয়ে উঠতে হয়েছে। আবার কেউ কেউ এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতেও পারেনি। ফলে এ বছর তরমুজের আবাদ গত বছরের তুলনায় কম হয়েছে। তবে, এ বছর ফলন ভালোই হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করোনাভাইরাসের কারণে সবকিছু থমকে গেছে। তা না হলে তরমুজচাষিরা এ বছর ভালো লাভবানই হতো। তারপরও কৃষি বিভাগ চেষ্টা করছে যাতে চাষিরা তরমুজ বাজারজাত করতে পারেন। তবে, তরমুজ বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে পরিবহন চলাচলে কোনো বিধি নিষেধাজ্ঞা নেই। তরমুজ বাজারজাতকরণে পরিবহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ না থাকার চাষিদের লিখিত ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে প্রতিটি উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে। তারপরও স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিক মিলে যদি একত্রে উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে চাষিদের তরমুজ বাজারজাতকরণে আর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
- বিষয় :
- করোনা