কক্সবাজার থেকে হাঁটতে হাঁটতে এভারেস্ট চূড়ায়

কক্সবাজার থেকে হেঁটে গিয়ে সোমবার নেপাল সময় সকাল সাড়ে ৬টায় পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে আরোহণ করেন ইকরামুল হাসান শাকিল। বেজক্যাম্পে তোলা-সংগৃহীত
ইজাজ আহ্মেদ মিলন, গাজীপুর; এম তুষারী, কালিয়াকৈর
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫ | ০৮:২৬
সমুদ্র শহর কক্সবাজারের ইনানি সৈকত থেকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হাঁটা শুরু করেছিলেন স্বপ্নবাজ তরুণ ইকরামুল হাসান শাকিল। লক্ষ্য দূর নেপালে অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। এর আগে বাংলাদেশ থেকে ছয়জন এভারেস্ট চূড়ায় উঠেছেন। কিন্তু তারা কেউই শাকিলের মতো হেঁটে সেখানে রওনা হননি। ফলে অন্যরকম উদ্দীপনা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন শাকিল। অতঃপর নানা চড়াই-উতরাই শেষে ৮৪ দিনে ১৪০০ কিলোমিটার পেরিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ছুঁতে পেরেছেন তিনি। নেপাল সময় গতকাল সোমবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শাকিল পৌঁছান এভারেস্ট চূড়ায়।
সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয় চূড়ায় আরোহণের পাশাপাশি বিরল এক রেকর্ড করে ফেলেছেন শাকিল। ‘সি টু সামিট’ নামে শাকিলের এ অভিযানকে ধরা হচ্ছে হেঁটে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিয়ে সবচেয়ে কম সময়ে এভারেস্ট জয়ের রেকর্ড। শাকিলের আগে আর মাত্র একজন এতে সফল হয়েছিলেন। ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ তাঁর ‘সি টু সামিট এক্সপেডিশন’ অভিযানে হেঁটে ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ৯৬ দিনে ১২শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পা রাখেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে। তবে শাকিল তাঁর চেয়েও বেশি পথ হেঁটে পাড়ি দিয়ে সর্বকনিষ্ঠ পর্বতারোহী হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন।
শাকিলের নেপালি ট্রাভেল এজেন্সি ‘এইটকেএক্সপেডিশনস’ এভারেস্ট জয়েল তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গতকাল দুপুরে শাকিলের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে তাঁর অভিযানের সমন্বয়করা জানিয়েছেন, শাকিল সামিট শেষ করেছেন এবং সুস্থ আছেন। ক্যাম্প-৪-এ নেমে এসেছেন। নেটওয়ার্ক না থাকায় বিস্তারিত তথ্য এখন দেওয়া যাচ্ছে না।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাগচালা গ্রামের প্রয়াত খবির উদ্দিন ও শিরিন আক্তার দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে শাকিল সবার বড়। স্কুলজীবন থেকেই পাহাড়-পর্বত চুম্বকের মতো টানত শাকিলকে। গাজীপুরের জনতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে উত্তরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। পড়াশোনা শেষ করে ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিংয়ে পর্বতারোহণের প্রাথমিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। এর আগে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে নেপালের পূর্ব-পশ্চিমে অবস্থিত বিস্তীর্ণ গ্রেট হিমালয়ের ট্রেইলে শাকিল উড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের পতাকা। সেবার ১০৯ দিনে ১৭শ কিলোমিটার পথ হেঁটে স্বপ্ন ছুঁইয়েছিলেন তিনি।
মাউন্ট এভারেস্টের আগে শাকিল আরও আরোহণ করেছেন ৬ হাজার ১৮৬ মিটার উঁচু মাউন্ট কায়াজো রি পর্বত, ৭ হাজার ১২৭ মিটার উঁচু হিমলুং, ৬ হাজার ৩৩২ মিটারের দোলমা খাংসহ বেশ কিছু পর্বতশৃঙ্গ।
শাকিলের বন্ধু এবি সিদ্দিক জানান, শাকিল গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কক্সবাজারের ইনানী সৈকত থেকে হাঁটতে শুরু করেন। হেঁটে ১২ দিনে ঢাকায় পৌঁছান। কয়েকদিন বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ হয়ে ২৮ মার্চ পৌঁছান পঞ্চগড়ে। বাংলাদেশ থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং হয়ে ৩১ মার্চ পা রাখেন নেপালে। এভাবে প্রায় ১৪শ কিলোমিটার পথ হেঁটে এভারেস্ট বেসক্যাম্পে পৌঁছান তিনি।
শাকিলের এভারেস্ট জয়ের খবরে আনন্দের বন্যা বইছে তাঁর স্বজন ও বন্ধুদের মধ্যে। শাকিলের শিক্ষক পিয়ার আলী কলেজের অধ্যক্ষ একেএম আবুল খায়ের বলেন, ‘পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে উড়েছে শাকিলের হাতে লাল সবুজের পতাকা। গর্বে বুকটা ভরে উঠেছে।’
কথা হয় শাকিলের মা শিরিনা আক্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সারাক্ষণ আমি ভয়ের মধ্যেই থাকি। ছেলের দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না। আমার দোয়া আছে ওর সঙ্গে। শাকিলের সঙ্গে আমার গত ১৬ তারিখ রাতে শেষ কথা হয়। ও আমাকে জানায়, মা আমি পাহাড়ের ওপর দিকে যাচ্ছি। তোমরা চিন্তা করো না। ওর জন্য খুব টেনশন করছি। কী জানি কী হয়। এখন মোবাইল ফোনে পাচ্ছি না। তবে কেউ একজন নেপাল থেকে জানিয়েছে, শাকিল নাকি শেষ চূড়ায় উঠেছে।’
শাকিলের ‘সি টু সামিট’ অভিযানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল ‘প্রাণ’। সহযোগী হিসেবে আছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), মিস্টার নুডলস, মাকলু-ই-ট্রেডার্স নেপাল ও সিস্টেমা টুথব্রাশ।
- বিষয় :
- এভারেস্ট জয়