ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

দেশেই সেমিকন্ডাক্টর উদ্ভাবন!

দেশেই সেমিকন্ডাক্টর উদ্ভাবন!

ফাইল ছবি

সাব্বিন হাসান

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫৮ | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | ১৪:৫৯

২০২৫ সালের মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে পাঁচ শতাধিক প্রকৌশলীর নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের সুপরিচিত প্রতিষ্ঠান উল্কাসেমি। অন্যদিকে, ২০৩০ সালের মধ্যে পাঁচ হাজার সেমিকন্ডাক্টর প্রকৌশলীর কর্মসংস্থান তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে উদ্যোক্তারা। লিখেছেন সাব্বিন হাসান

বাংলাদেশ দপ্তরে নতুন লোগো উন্মোচন করেছে সেমিকন্ডাক্টর উদ্যোক্তা। ধারাবাহিক ১৭ বছরের যাত্রার নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। পুরোনো লোগো ছেড়ে নতুন লোগো উন্মোচন ও আগামীর পথচলার পরিকল্পনা উপস্থাপন করে উদ্যোক্তা।

নতুন প্রজন্মের প্রকৌশলীদের জন্য উন্নতমানের ক্যারিয়ার তৈরি ও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে উল্কাসেমি উদ্ভাবিত ও উন্নয়ন করা সেমিকন্ডাক্টর।

সারাবিশ্বে সেমিকন্ডাক্টরের চাহিদা ও প্রয়োজন ক্রমাগত বাড়ছে বাজারে। ২০২১ সালে বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টর বাজার ৪৫২ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৮ সালের মধ্যে ৮০৩ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পকে ২০৩০ সালের মধ্যে মাল্টিবিলিয়ন ডলারের বাজারে রূপান্তর করার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

উল্কাসেমি প্রতিষ্ঠানের সিইও ও সভাপতি মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমান জানান, নতুন সবকটি উদ্যোগ দেশে প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের নিত্যনতুন উদ্ভাবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশকে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের শীর্ষস্থানে নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন লোগোর পরিকল্পনা করা। দেশের তরুণ ও প্রযুক্তি প্রতিভার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার বাংলাদেশের প্রকৌশলীদের মেধায় বিশ্বাসের প্রতিফলন। একসঙ্গে আমরা এমন ভবিষ্যৎ তৈরিতে কাজ করছি, যা বাংলাদেশকে বৈশ্বিক প্রযুক্তি ক্ষেত্রে মূল ভূমিকায় পৌঁছে দেবে।

জানা গেছে, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে এআই, রোবটিকস, আইওটি প্রযুক্তি খাতে। যার ফলে মানব সভ্যতা উপলব্ধি করছে নিত্যনতুন কর্মযজ্ঞের উদ্ভাবন। বর্তমান বিশ্বে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের বাজার প্রায় ৬০ হাজার কোটি ডলার। ২০৩০ সালের মধ্যে যা ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারে পরিণত হবে। বাজারের বড় অংশ ধরে রেখেছে এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ। মূলত আধিপত্যের লড়াইয়ে উল্কাসেমির মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজেদের জায়গা বিশ্ববাজারে সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করেছে। জনসংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের সংখ্যা বিশ্বের বহু দেশের তুলনায় বেশি। যদি জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারি সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে, তাহলে বাংলাদেশের জন্য খুলে যাবে অসীম সম্ভাবনার দুয়ার। আকারে ছোট হলেও বেশ জটিল প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় এই সেমিকন্ডাক্টর। বিশাল সেই কর্মযজ্ঞের ডিজাইনিং নিয়ে কাজ করেন আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা। ভবিষ্যতে ফেব্রিকেশন নিয়েও কাজ করার বিশাল সুযোগ এখন দৃশ্যমান।

তরুণ প্রকৌশলীরা এখন সেমিকন্ডাক্টর শিল্পোৎপাদন নিয়ে বেশ আগ্রহী। বিপুল সম্ভাবনাময় তরুণ প্রকৌশলীদের দক্ষতা রূপান্তর করতে পারলে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে আগামী দিনে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সঠিকভাবে ও যথাযথ সরকারি-বেসরকারি খাতের সমর্থন পেলে দেশের সেমিকন্ডাক্টর খাতকে সময়ের ব্যবধানে মিলিয়ন থেকে বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়া খুব বেশি চ্যালেঞ্জের হবে না। ফলে তৈরি হবে সুবিশাল প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মক্ষেত্র, যা সমূলে বদলে দেবে দেশের প্রযুক্তি অঙ্গনকে। বাংলাদেশে শিক্ষা, অবকাঠামো ও প্রযুক্তি– তিনটি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে শক্তিশালী সেমিকন্ডাক্টর শিল্প গড়ে তুলতে সম্ভাব্য সব ধরনের উদ্যোগ নিয়ে কাজ চলছে বলে জানানো হয়।

উদ্ভাবন মানেই এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। নতুন লোগো ডিজাইনে গতি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এআই শব্দকে ভিন্নরূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। নব্য লোগো মূলত নিত্যনতুন উদ্ভাবন, অ্যানালগ ও ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের মেলবন্ধন এবং জাতীয় ও বৈশ্বিক সম্প্রসারণের প্রতিচ্ছবি। সারাবিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে এআই ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে কর্মযজ্ঞ করছে উল্কাসেমি। নতুন লোগোতে জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়।

উল্কাসেমির চেয়ারম্যান আরিফা চৌধুরী রহমান ও চিফ অপারেটিং অফিসার মিজানুর রহমান জানান, উল্কাসেমি প্রাইভেট লিমিটেড প্রধানত সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন ও উন্নয়ক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। যার প্রধান দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি।

বাংলাদেশেও কার্যক্রম চলছে। ২০০৭ সালে যাত্রা করে আইসি ডিজাইন, পিএনআর, ভেরিফিকেশন ও কাস্টম লেআউট কাজে বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর শিল্পোৎপাদনের সঙ্গে জড়িত প্রায় সব ধরনের চাহিদা পূরণ ও পরিষেবায় কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×