মনিরামপুর
২৫ দিনে সংগ্রহ হয়নি ১ কেজি ধানও

ফাইল ছবি
এস এম মজনুর রহমান, মনিরামপুর (যশোর)
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২২ | ২৩:৩৩
মনিরামপুরে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে প্রায় এক মাস আগে। আমনের মৌসুমও শেষের দিকে। অথচ রোববার পর্যন্ত এক কেজি ধান-চালও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।
চাষি ও মিলাররা বলছেন, সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম অনেক বেশি। এ কারণে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করা থেকে বিরত রয়েছেন তাঁরা। চালের ক্ষেত্রেও তাঁরা একই কারণ উল্লেখ করেছেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস জানিয়েছে, স্থানীয় ৩৩ মিলারের মধ্যে চাল বিক্রি করতে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন মাত্র সাতজন। তাঁদের কাছ থেকে কিছু চাল সংগ্রহের আশা করছে খাদ্য বিভাগ। এর আগে বোরো মৌসুমে চাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় চুক্তিবদ্ধ ছয় মিলারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২২ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে। মৌসুমের শুরুতে অনুকূল আবহাওয়া এবং সার, বীজ ও কীটনাশকের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় চাষ হয়েছে ২২ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। ফলনও ভালো। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, নিবন্ধিত চাষিদের কাছ থেকে ২৮ টাকা হারে প্রতি কেজি ধান এবং মিলারদের কাছ থেকে ৪২ টাকা দরে চাল কেনার কথা।
রোববার বিকেলে পৌর শহরের পাইকার হাফিজুর রহমান জানান, প্রতি মণ মোটা ধান (স্বর্ণা) বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১১শ টাকায়। পাশাপাশি ব্রি-২৮ ১২শ, ব্রি-৬৩ এক হাজার ৫০০ ও বাসমতী ধান এক হাজার ৭০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
চাল বিক্রেতা মোড়ল ট্রেডার্সের মালিক মোনায়েম মোড়ল জানান, স্বর্ণা ধানের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৬ টাকায়। মণপ্রতি দাম এক হাজার ৮৪০ টাকা। ব্রি-২৮ প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫০ (মণ দুই হাজার), ব্রি-৬৩ ৬৬ (দুই হাজার ৬৪০) ও বাসমতী চাল ৭৫ (তিন হাজার) টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মনিরামপুর থেকে এবার ৮৫৪ টন ধান এবং ৮৪২ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সে মোতাবেক গত ১৭ নভেম্বর শুরু হয় সংগ্রহ অভিযান। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু এখনও চাষিদের কাছ থেকে এক কেজি ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহও শূন্যের কোঠায়। চাল প্রতি মণ এক হাজার ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারমূল্য বেশি।
গালদা গ্রামের চাষি এনামুল হক সোহান এবার আমন চাষ করেছেন ১৬ বিঘা জমিতে। তিনি জানান, বাজারে সর্বনিম্ন এক হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারের নির্ধারিত দাম প্রমি মণ এক হাজার ২০ টাকা। লোকসান করে তিনি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করেননি।
মাঝিয়ালি গ্রামের নিরঞ্জন কুমার দাস জানান, মৌসুমের শুরুতে অনুকূল আবহাওয়া থাকলেও মাঝপথে বৃষ্টিপাত হয়নি। এতে পোকামাকড়ের আক্রমণসহ নানা কারণে এবার ধানের আশানুরূপ ফলন পাননি। এর ওপর বাজারমূল্যের চেয়ে সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্য কম থাকা ও কর্তৃপক্ষের নানাবিধ হয়রানির কারণে তিনিও খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করেননি। একই কারণ দেখিয়ে মিলাররা চাল দিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। ব্যাপারী অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আবদুস সালাম এবং আল আমিন রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী ও উপজেলা রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম জানান, সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে চাল বিক্রি করলে মণপ্রতি লোকসান দিতে হবে প্রায় ৫০০ টাকা। খাদ্য বিভাগের অনুরোধ ও লাইসেন্স ঠিক রাখতে লোকসান করেও তিনিসহ সাতজন চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
উপজেলা সংগ্রহ কমিটির সদস্য সচিব ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিত কুমার সাহা বলেন, ধান সংগ্রহ করা সম্ভব না হলেও চুক্তিবদ্ধ সাত মিলারের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করা যাবে। বোরো মৌসুমে চুক্তিবদ্ধ ছয় মিলার চাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় চিত্তরঞ্জন রাইস মিল, মাসুদ রাইস মিল, পাটোয়ারী রাইস মিল, লিটন রাইস মিল, কুণ্ডু রাইস মিল ও অগ্রণী রাইস মিলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। ধান-চালের বাজারমূল্য বেশি থাকার কথাও স্বীকার করেন তিনি।
- বিষয় :
- ধান-চাল সংগ্রহ
- মিলার
- আমন
- চাল বিক্রেতা
- মনিরামপুর