চট্টগ্রাম
পাল্টে যাচ্ছে বহদ্দারহাট, গড়ে উঠছে আলো ঝলমলে ‘আরেক’ শহর

ন্দর নগরী চট্টগ্রামে নির্মিত হয়েছে ছোট-বড় কয়েকটি শপিংমল
তৌফিকুল ইসলাম বাবর, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪:৩১ | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ | ১৬:৩৪
বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ব্যস্ততম এলাকা বহদ্দারহাট মোড়। কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত (র.) সেতু ও কালুরঘাট সেতু হয়ে এই বহদ্দারহাট থেকে মূল শহরে প্রবেশ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। আবার কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে আসা উত্তর চট্টগ্রামের একাংশের মানুষও মূল শহরে প্রবেশ করে এই এলাকা দিয়ে। কিন্তু ফুটপাত দখল, নালার ওপর মার্কেট নির্মাণ এবং যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিতভাবে দোকানপাট নির্মাণ করায় ঘিঞ্জি এলাকায় পরিণত হয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকাটি। তবে কিছুদিনের ব্যবধানে পাল্টে যাচ্ছে এলাকাটি।
নালার ওপর থেকে ভেঙে ফেলা হয়েছে সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বিতর্কিত ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের’ দোকানগুলো। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় দোকানগুলো ভেঙে দেওয়ার পর প্রশস্ত হয়েছে মোড়টি। স্বজন সুপার মার্কেট নামে একটি মার্কেটের প্রবশেমুখ দখল করেই মার্কেটটি গড়ে তোলা হয়েছিল। এটি ভেঙে দেওয়ায় বেরিয়ে এসেছে সেই মার্কেটের অবয়ব ও প্রববেশ পথ। এছাড়া বহদ্দারহাট মোড়েই রাস্তার এপাশ-ওপাশের ব্যবধানে গড়ে তোলা হয়েছে দুটি মার্কেট। এর মধ্যে একটি মার্কেট করা হয়েছে আন্তর্জাতিকমানের। এছাড়া আশেপাশে গড়ে উঠছে বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন ও উঁচুমানের শপিং মল। সড়কের আইল্যান্ড ভরে উঠেছে বৃক্ষরাজিতে। এক সময় অবহেলিত থাকলেও সব মিলিয়ে এখন শহরের মধ্যে গড়ে উঠছে পরিকল্পিত ও আলো ঝলমলে আরেক শহর।
সম্প্রতি বন্দর নগরী চট্টগ্রামে নির্মিত হয়েছে ছোট-বড় কয়েকটি শপিংমল। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি উচ্চ ও মধ্যবিত্তসহ সব মানুষের সাধ্য বিবেবচনা করে গড়ে তোলা হয়েছে এসব মার্কেট। বহদ্দারহাট মোড়ে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন দুটি মার্কেট। একটি বিশ্বমানের শপিং মল ‘ফিনলে সাউথ সিটি’ এবং অপরটি আধুনিক শপং মল ‘ইলিজি স্কাই পার্ক’। ফিনলে সাউথ সিটিতে ক্রেতারা এক ছাদের নিচে অনেক কিছু তো পাবেনই, একইসঙ্গে এখানে কেনাকাটায় মিলবে বিশ্বমানের অভিজ্ঞতা। ১৭ জানুয়ারি এই শপিং মলের যাত্রা শুরু করে। এর আগে এই শপিং মলের গা ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে ইলিজি স্কাই পার্ক। মধ্যবিত্তদের গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে শপিং মলটি। এই দুটি শপিংমল নতুন রূপ দিয়েছে বহদ্দরহাট এলাকাকে। বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে কেনাকোটার জন্য ভিড় করছেন লোকজন। এতে এই এলাকায় মানুষের আনাগোনা আরও বেড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. নাছির উদ্দীন সমকালকে বলেন, বহদ্দারহাট বরাবরই অপরিচ্ছন্ন, ঘিঞ্জি এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে এলাকাটিতে শপিংমলসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা গড়ে উঠার পাশাপাশি বহুমাত্রিক উন্নয়নের ফলে এলাকাটি এখন নতুন রূপ পেতে যাচ্ছে।
এদিকে বহদ্দারহাট থেকে চকবাজার সড়কের মধ্যে ফিনলে প্রপার্টিজের মাধ্যমে সড়ক বিভাজন নির্মাণের পাশাপাশি সেই বিভাজরে মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষচারা রোপন করা হয়েছে। পাশাপাশি করা হয়েছে লাইটিংও। এছাড়া বহদ্দারহাট থেকে মুরাদপুর হয়ে ষোলশহর পর্যন্ত জলাবদ্ধতার প্রকল্পের আওতায় নালা বড় করা হচ্ছে। এজন্য বেদখল জায়গা উদ্ধার করা হচ্ছে। এতে বাড়ছে সড়কের প্রশস্ততা। এই কাজটি এখনও শেষ হয়নি। অল্প সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ হলে আরও সহজ হবে যাতায়াত ব্যবস্থা, যানবাহন চলাচলে।
বহদ্দারহাট এলাকায় পুরাতন ভবনগুলো ভেঙে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানকার কাঁচাবাজারটির উন্নয়ন করা হচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে বাজারের পরিসর। ফলে ক্রেতাদের জন্য কেনাকাটা আরও সহজ হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন দৈনন্দিন কেনাকাটা করতে আসছেন এই বাজারে।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সমকালকে বলেন, বহদ্দারহাট এলাকাটি নানা কারণে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। কিন্তু এটি অবহেলিত ছিল। তাই এলাকাটিকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এখনও কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে এলাকাটির চেহারাই পাল্টে যাবে।
ফিনলে সাউথ সিটি শপিং মল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আইয়ুব খান বলেন, ফিনলে সাউথ সিটি শপিং মল একটি আন্তর্জাতিকমানের শপিং মল। দৃষ্টিনন্দন মার্কেটটি এলাকার সৌন্দর্য ও মান বাড়িয়েছে। এছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ফিনলে বহদ্দারহাট-চকবাজার সড়কটির আইল্যান্ড নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। তাতে আলোকায়ন করে বৃক্ষরাজিতে সাজানো হয়েছে। সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় এই কাজটি করা হয়েছে।